হুমকি-কুৎসায় অস্বস্থিতে বসুমতির সাধারণ সদস্যদের বর্তমান কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১১:১৬ পিএম

ছবি--সংগৃহীত
আরো পড়ুন
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানীর বসুমতি পরিবহন থেকে রাতারাতি এনায়েত গংদের লাপাত্তা হওয়ার পর কোম্পানী রক্ষায় সাধারণ বাস মালিকরা নতুন কমিটি করেও এখন বিপাকে। চলছে হামলা-মামলা, হুমকি-ধমকি, কুৎসা রটিয়ে রাজধানী জুড়ে পোস্টার সাটানোর মতো কার্যকলাপ। এহেন কার্যকলাপে অপ্রস্তুত ও ভীত অভিযোগ বর্তমান কমিটির কয়েকজন সদস্যদের।
প্রাপ্ত তথ্যে ও কয়েকজন বাস মালিক সূত্রে জানা যায়, গত ৮-৯ বছর পূর্বে রাজধানীর পরিবহন ব্যবসায় একচ্ছত্র অধিপতি খ্যাত খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বসুমতি পরিবহনকে সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করে। তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে তার বড় ভাই খন্দকার মনির, মালিক সমিতির হুমায়ন কবির তপন, হাবিবুর রহমান সহ কয়েকজনকে নিয়ে কোম্পানীটি পরিচালনা করতেন। এমনকি কোম্পনীটির অনুমোদিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বৈধ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল মুনসুর বুলবুল হওয়া সত্বেও তাকে কোনদিন কোম্পানীটি পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কোন বোর্ড মিটিংয়েও তাকে ডাকা হতোনা। এভাবে এনায়েত গং একচ্ছত্র অধিপত্য বিস্তার করে বিভিন্ন অযুহাতে এযাবৎ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার প্রতিবাদ কোন সাধারণ বাস মালিকরা কখনও করতে পারেনি। করলেই তাকে নানান অজুহাতে দিতে হয়েছে জরিমানা নামক চাঁদা। অথবা সে সদস্যর গাড়ি চালাতে রাস্তায় করা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা। কোম্পানীর সাধারণ সদস্যদের কখনও কোন হিসাবও দেওয়া হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরই কোম্পানী থেকে হাওয়া হয়ে যায় এনায়েত গং। রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলার ডামাডোলের স্থবিরতায় কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর এখন সেই পুরানো এনায়েত গং আবার বিভিন্ন অজুহাতে কোম্পানীতে ফিরে আসার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ বর্তমান কমিটির সদস্য সহ সাধারণ বাস মালিকদের।
আবুল হোসেন নামে এক বাস মালিক বলেন, আমি কোম্পানীটির শুরু থেকেই যুক্ত আছি। আমার ২টি বাস রয়েছে। এ কোম্পানীর প্রকৃত এমডি বুলবুল সাহেব। কোম্পানী চালু হওয়ার পর কিছুদিন তিনি কোম্পানীর কাজকর্ম পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে সড়কের সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ কোম্পানীটি একেবারে নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেয়। এমডি না হয়েও কোম্পানী পরিচালনায় তিনি তার ভাই খন্দকার মনিরকে দ্বায়িত্ব দেন। তার সাথে তপন, হাবিবসহ কয়েকজন মিলে কোম্পানীর সব কাজ পরিচালনা করে। এনায়েত ভাই ও তার আত্বীয় স্বজনের প্রায় ২০-২২টার মতো গাড়ী কোম্পানীতে চলছিল। যা ভিআইপি নামে চলতো। তাদের কোন সিরিয়াল অথবা কোন স্ট্যান্ডে দাড়ানোর টাইমলিমিটি ছিল না। যতক্ষন তাদের গাড়ী যাত্রী ভর্তি না হতো ততক্ষন যে কোন স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকতে পারতো। কিন্তু আমরা সাধারণ বাস মালিকরা ওয়েবিলের টাকা দিয়েও কোন সুবিধা পেতাম না। প্রতিবাদ করলেই নানা অজুহাতে জরিমানার নামে টাকা আদার করা হতো। বসুমতি কোম্পানীটি একসময় এনায়েত খন্দকার ও তার ভাইয়ের নিজস্ব সম্পত্তি বনে গিয়েছিল। আওয়ামী সরকারের ক্ষমতায় তারা এসব কাজ করতো। ৫আগস্টের পর এনায়েত গং পালিয়ে যাওয়ার পর সাধারণ বাস মালিকরা মিটিং করে নতুন কমিটি গঠন করেছি। এখন রোড খরচের টাকাও কম দিতে হয়। যাত্রী অনুযায়ী ইনকাম হলে এখন নিয়মিত দুটো টাকা ড্রাইভার হেল্পারকে দিয়ে ঘরে নিতে পারি।
আরেক বাস মালিক মাইনুদ্দিন বলেন, বসুমিতিতে আমার দুইটা গাড়ী ৪-৫ চলছে। একসময় এই কোম্পানীটি এনায়েত খন্দকার তার ভাই মনিরকে দিয়ে পরিচালনা করতেন। কিন্তু কাগজে কলমে বুলবুল ভাই এমডি হলেও তার কোন গ্রহনযোগ্যতা ছিল না। তিনি এ কোম্পানীতে ঢুকতেই পারতেন না, তাকে কোম্পানীর কোন কাজেই ডাকা হতো না। তিনি বৈধ এমডি হয়েও তাদের কাছে ছিল অবৈধ। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এনায়েত ভাইয়ের পলায়নের পর তার ভাইসহ কোম্পানীর সব কর্তাব্যক্তিরা প্রাণ বাচাতে পালিয়ে যায়। এরপর কিছুদিন কোম্পানীটি অভিভাবকহীন ভাবে চলতে থাকে। তখন যে শুন্যতা সৃস্টি হয় সে শুন্যতা মেটাতে আমরা কয়েকজন সাধারণ বাসমালিকরা একত্রিত হয়ে কোম্পানীর মুল এমডি বুলবুল ভাইকে আবারও কোম্পানীতে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করি। সেদিন সবাই একমত হয়ে আমরা মূল এমডি বুলবুল ভাইকে নিয়ে গত ২২ আগস্ট একটা সভা করি। সে সভায় বসুমতির বেশিরভাগ বাস মালিকরা উপস্থিত ছিলাম। সবাই একমত হয়ে বুলবুল ভাইকে কোম্পানী পরিচালনার অনুরোধ করি এবং তিনি আমাদের সকলের স্বার্থে কোম্পানীর দ্বায়িত্বভার গ্রহন করলে নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এনায়েত-মনির গংদের সময়কালে যে সকল বাস মালিকরা বিভিন্ন সুবিধা নিত তাদের অবৈধ সুবিধা বন্ধ হওয়ায় আবারও এনায়েত গংদের ফিরিয়ে আনার চক্রান্ত শুরু করে। সেই চক্রান্তের অংশ হিসাবে কিছুদিন পূর্বে নতুন কমিটির কয়েকজন পরিচালকদের ছবি দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে শহরে পোস্টার ব্যনার সাটায়। বসুমতিতে এনায়েত গং ফিরে আসার চক্রান্ত এখনও চলমান এবং এই চক্রান্তে সেই সময়ের সুবিধাভোগী হাতে গোনা কয়েকজন বাস মালিকরা লম্ফঝম্প করছে। কিন্তু এখন সাধারণ বাস মালিকরা আর বোকা নেই, আজ তারা নিজেদের অধিকার সম্মন্ধে সচেতন। তাদের কোন চক্রান্ত আর বাস মালিকরা সফল হতে দেবেনা। ওয়েবিলে অতিরিক্ত টাকা আদায়, জরিমানার নামে টাকা আদায়, নিজেদের গাড়ী ভিআইপি চালানো, সাধারণ বাস মালিকদের কোন দাম নেই এইসব বৈষম্য আর এখন কেউ মেনে নেবে না। এখন সবাই অনেক সচেতন হয়েছে।
বসুমতির পরিবহনের পরিচালক সবুজ বলেন, একসময় এনায়েত ও তার ভাই মনির কোম্পানীর সব আয় নানা অজুহাতে লুটে নিয়েছে। কোন হিসাব কাউকে দেয়ার প্রয়োজন বোধ করতো না। তাদের নিজেদের গাড়ী ছিল ভিআইপি আর অন্য গুলো সাধারণ। ভিআইপির জন্য নির্দেশনা ছিল বিশেষ ব্যবস্থার। কোন সিরিয়াল নাই, টাইম লিমিট নাই, অন্যায় করলে জরিমানা নাই, যখন যেখানে খুশি গাড়ী ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারতো তারা। তাদের খেয়াল খুশিই ছিল কোম্পানীর সিদ্ধান্ত।
আরেক পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী সরকারের পলায়নের পর গত ২২ আগস্ট কোম্পানীর সাধারণ সদস্যরা একটি জরুরী সভা আহ্বান করে। সেদিন উপস্থিত বেশিরভাগ বাস মালিক সদস্যরা কোম্পানীটি পরিচালনার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটিই বর্তমানে বসুমতি পরিবহনের সাধারণ সদস্য দ্বারা নির্বচিত বৈধ পরিচালনা কমিটি। এবং সেই কমিটির সদস্যরাই এখন কোম্পানীটি পরিচালনা করছে।