
মেলায় আগত দর্শণাথী
ছাত্রজনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হাজারো তাজা তরুণের বুকের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেখানে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ শাসনামলে রাজধানীর দখলকৃত মাঠ উচ্ছেদ করে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে সেখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন কয়েকটি প্লটের জায়গাকে মাঠ বানিয়ে মেলার নামে চলছে স্থায়ী দখলের চেষ্টা।
রাজধানীর পল্লবী থানাধীন ৩ নং ওয়ার্ডের প্যাসির রোডে মাসব্যাপী চলছে এ মেলার মহাযজ্ঞ।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, গত মাসেও যেখানে প্লটগুলি উন্মুক্ত মাঠ ছিল। সেখানে চারিদিক দিয়ে ঘিরে নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকশ দোকান। মাঠের এককোনার স্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। মাঝখানে বানানো সুউচ্চ টাওয়ারে জ্বলছে কয়েকশ রঙিন বাতি। পুরো মাঠ ঘিরে বাসানো কয়েকশ দোকানে চলছে বিকিকিনি। ভেতরে একভাগে বসানো নাগরদোলা অস্থায়ী নৌকায় চলছে শিশুদের উদ্দিপনা। সাথে রয়েছে মিনি রেল লাইন। বিভিন্ন জায়গায় বসানো খাবারের দোকানে তরুণ তরুণীর ভিড়। মাঠের উত্তর ও দক্ষিনে ইট সিমেন্ট বালুতে বানানো গেট দিয়ে টিকিট দিয়ে ঢুকছে শত শত দর্শনার্থী। গেটের পাশেই বানানো হয়েছে হোন্ডা ষ্ট্যাণ্ড যেখানে টাকার বিনিময়ে রাখা যায় হোন্ডা। রাস্তায় দখল করে বসানো হয়েছে কয়েক’শ ফুচকা চটপতির অস্থায়ী ভ্যান। সবকিছুই রাখা যায় টাকার বিনিময়ে। বস্ত্রমেলা নামে হলেও পুরো মেলাতেই রয়েছে শিশুদের রাইড আর খাবার দোকান। মাঠের বিভিন্ন কোনে নতুন দোকানের সেডে অথবা হাটার ছলে রয়েছে মেলার নিয়ন্ত্রক বাহিনীর সদস্যরা। উৎসাহী অচেনা মুখ দেখলেই ছুটে এসে জানতে চাইছে কেন এখানে আসা বা কি প্রয়োজন?
মাঠের আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এটি আসলে গৃহয়ণের বরাদ্ধকৃত প্লটের জায়গা। এখানে বরাদ্দকৃত যে প্লট গুলো রয়েছে, তা অনেক বছর আগেই বরাদ্দকৃত এবং বরাদ্দপ্রাপ্তদের বুঝিয়ে দিলে তারা এখানে তাদের নিজ নিজ প্লটের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে বুঝে নেয়। এভাবে কয়েক বছর থাকার পর গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলয় মানিক ও স্থানীয় এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার নজর পড়ে এ প্লটগুলির ওপর। কাথিত আছে তারা প্রত্যেক প্লট মালিকদের কাছ থেকে নগদ টাকার সুবিধা আদায়ের দাবী করলে প্লট মালিকরা তা দিতে অস্বীকার করে। এরপর কাউন্সিলর মানিক এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার মদদে স্থানীয় তার দলীয় ক্যাডার ও আশপাশের বিভিন্ন স্কুলের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামিয়ে এই প্লটের জায়গাটিকে মাঠ ঘোষনা দাবিতে মিছিল মানববন্ধন করেন। মাঠটি তখনকার প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই শেখ মনির নামে ঘোষনা করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র বর্তমানের পলাতক আতিকুর রহমান। এরপর একরাতেইর মধ্যেই সেখানে কয়েকশ ট্রাক বালু ফেলে সমান করে সেটিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেন মেয়র আতিক। তারপর থেকেই এই জায়াগাটি মাঠ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
বর্তমানে এই মাঠে মেলার আয়োজন সম্পর্কে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, একমাসের জন্য মেলার আয়োজনের কথা বলে মাস পার হলো তারপরও মেলা ভাঙার কথা নেই। শুনেছি পুলিশ ডিসিসহ বিভিন্ন জায়গায় চলছে দেনদরবার। এই মেলার বৈধতা নিয়ে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হলেও স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের নেই কোন মাথাব্যথা। অবস্থদৃষ্টে মনে হয় তাদের কাছে যেন টাকাই মূখ্য। গত একমাস ধরে থানা পুলিশই এখানে ক্যাম্প বসিয়ে তাদের পাহারা দিচ্ছেন। এবছর এই মেলার কারণে এজায়গার ঈদের নামাজও আদায় করতে পারেনি আশপাশের বাসিন্দারা।
এদিকে মেলা আয়োজক এসপিজিআরসির সাধারণ সম্পাদক পরিচয়দানকারী সাব্বির হোসেন গত আওয়ামী সরকারের আমলে স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লার খাস লোক ছিলেন। আওয়ামীলগের ত্যাগী নেতা বনে তারপক্ষে নির্বাচনে ভোট চাওয়া থেকে শুরু করে তার দাপটে এলাকায় ভিন্ন মতের থাকায় দায় ছিল। এখন ক্ষমতার পরিবর্তনে আবার সে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে মিশে (অনেকের মতে টাকার বিনিময়ে) খাস বিএনপি বনে গেছেন।
মেলার অনুমতি বিষয়ে সাব্বির হোসন বলেন, ‘মেলার অনুমতি আছে আপনাকে পাঠিয়ে দিব। কিন্তু এরপর কয়েকদিন পার হলেও তিনি আর মোবাইল ফোন ধরেননি এবং মেলার অনুমতিপত্রও দেখাতে পারেননি।
বিস্তারিত আসছে .....