
নড়াইলে সম্প্রতি দুটি হত্যাকাণ্ডের জেরে কমপক্ষে দেড়শ একর জমির ধান ঘরে তোলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দুই হত্যাকাণ্ডের আসামিপক্ষের লোকজন এলাকাছাড়া। যার ফলে পাকা ধান জমিতে নষ্ট হচ্ছে। কালিয়ার সিলিমপুরে হাসিম মোল্যা হত্যাকাণ্ডে আসামিপক্ষের অভিযোগ তৃতীয় পক্ষ এই সুযোগ নিয়ে বোরো ধান কাটতে গেলে তাদের বাধা দিচ্ছে। চাওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
গত ৩১ মার্চ বিকালে লোহাগড়ার লাহুড়িয়ায় মুক্তিযোদ্ধা আকবর শেখকে খুন করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শতাধিক পরিবার এলাকাছাড়া। এলাকায় আসামিপক্ষের কাউকে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না। গত ১৫ মার্চ কালিয়ার হামিদপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর গ্রামের হাসিম মোল্যাকে খুনের ঘটনাও আসামিপক্ষ এলাকা, যার ফলে জমিতে পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে।
জানা গেছে, সিলিমপুর ও গাজীরহাট এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় হামিম মোল্যা ও মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু গ্রুপের সঙ্গে জনি মোল্যা গ্রুপের বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা কাদের মোল্যা বাদী হয়ে কালিয়া থানায় নড়াইল-১ আসনের সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ নেতা কবিরুল হক মুক্তিকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে এবং গাজীরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু মফিজুল ইসলাম ঠান্ডুকে প্রধান আসামি করে ৩১ জনের বিরুদ্ধে কালিয়া থানায় মামলা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর আসামিপক্ষের প্রায় ২৫টি পরিবারের ১০টি বাড়িতে আগুন এবং ৩০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
আসামি রউফ শেখের ছেলে আউলিয়া শেখ বলেন, আমাদের বংশের কমপক্ষে ২০ একর জমির পাকা বোরো ধান কাটতে পারছে না। ধান কাটতে কৃষি শ্রমিক পাঠালে বাদী পক্ষের মুস্তাক মোল্যাসহ অনেকে তাদের জমি থেকে উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বলছে প্রতিবিঘা জমির ধান কাটতে গেলে ১০ হাজার টাকা দেওয়া লাগবে। সব মিলিয়ে প্রায় একশ একর জমির পাকা ধান এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সিলিমপুর ও গাজীরহাটের ৪০টির মতো মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আমাদেরই ১০টি ঘের রয়েছে।
কালিয়া থানায় ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জমি থেকে ধান কাটার বিষয়টি আমাদের দেখার বিষয় নয়। এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না।
এদিকে লোহাগড়ায় গত ঈদুল ফিতরের দিন ৩১ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা আকবর শেখ (৭৫) নিহতের ঘটনায় শতাধিক বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শতাধিক পরিবার এলাকাছাড়া। এলাকায় আসামিপক্ষের কাউকে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না।
আসামিপক্ষের প্রায় ৩০ একর জমির বোরো ধান কাটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৩০ একর জমির পাট পরিচর্যার অভাবে নষ্টের পথে।
লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের লাহুড়িয়া গ্রামে মনিরুল জমাদ্দার ও একই গ্রামের মিল্টন জমাদ্দার গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারে এ খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৩ এপ্রিল নিহতের স্ত্রী আকলিমা বেগম বাদী হয়ে লাহুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরান সিকদারকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
লাহুড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, তার আপন ভাই আকবর হত্যা মামলার আসামি জাকির হোসেন মাস্টারের ৫০ শতাংশ জমিতে বোরো ধান পাকলেও তা কাটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ২ একরের পাটের জমিতে সেচ ও পরিচর্যার অভাবে নষ্টের পথে।
লোহাগড়া উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হান্নান সিকদার রুনু বলেন, বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে আসামিপক্ষের কাউকে এলাকায় ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না ধান কাটবে কীভাবে। বাদী পক্ষ হত্যাসহ ৪টি মামলায় দেড় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ফলে শতাধিক পরিবারই বাড়িছাড়া।
নিহতের ভাতিজা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের পক্ষের কেউ বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুটের সঙ্গে কেউ জড়িত নয়। এলাকায় আসতে কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। যার ধান সেই কাটবে আমাদের বাধা দেওয়ার কী আছে।
লোহাগড়া থানার লাহুড়িয়া ক্যম্প ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তুহিন বলেন, এলাকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। যাদের নামে মামলা রয়েছে তারা এলাকায় নেই। দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে ধান কাটা হলে সবার জন্য ভালো হবে।