প্রায় ২০০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিও

সিঙ্গাইর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ১৮৩৪ জন গ্রাহকের প্রায় ২০০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে ‘গ্রাম মানবিক উন্নয়ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের একটি এনজিও। এঘটনায় বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা কর্মকর্তাদের অফিসে না পেয়ে এনজিও মালিকদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। উপজেলা সমবায় অফিস বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে এঘটনায় উপজেলার জামসা ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা কর্মকর্তাদের অফিসে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে এনজিও মালিকদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন।
ভুক্তভোগী এক গ্রাহক জানান, সম্প্রতি দেশের অনেক তফসীলি ব্যাংক দেওলিয়া হয়ে যাবে এমন প্রচারে ব্যাংকের প্রতি আস্থা ছিলো না। এজন্য ব্যাংক ও পোস্ট অফিস থেকে ৪৮ লাখ টাকা তুলে এই এনজিওতে রেখে আজ সর্বশান্ত হয়েছিন।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, ১ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৮ শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ২ শত কোটির উপরে আমানত নেয় এনজিওটির মালিক জামসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী কামরুজ্জামান, মো. আমজাদ হোসেন, মো. উজ্জ্বল ও মো. হাবিবুল্লাহ। মো. হাবিবুল্লাহ মারা গেলে তার স্ত্রী সেটি পরিচালনা করেন।
গ্রাহক কুয়েত প্রবাসী মো. মিলন হোসেন জানান, ১৫ বছর বিদেশে কষ্ট করে টাকা জমাইছি। ৪৮ লাখ টাকা এই এনজিওতে জমা রাখছিলাম। এখন তারা আমাকে শুধু ঘুরাইতাছে। টাকা না পাইলে আমি পথে বসবো।
আরেক ভুক্তভোগী নারী জানান, আমার ২০ লাখ টাকা জমা নিয়েছে। প্রবাসী স্বামী টাকা তুলতে না পেরে এখন আমাকে ছেড়ে গেছে। ছেলেটাকেও টাকার জন্য বিয়ে করাতে পারছি না।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, একাধিকবার টাকা দেয়ার আশ্বাস দেয়ার পরও কোনো টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি। তাই তারা আর কোনো আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীরা দ্রুত বিচার এবং টাকা উদ্ধারের দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কালী ইয়াকুব হোসেন রাজা বলেন, আমাদের এলাকায় কৃষক এবং প্রবাসী বেশী। তাদের সারাজীবনের সঞ্চয়ের টাকা গুলো নিরাপত্তার স্বার্থে এলাকার স্থানীয় এনজিওতে রেখেছেন।সেই টাকার মুনাফা দিয়ে তারা চলতেন। গত দুই বছর যাবত গ্রাহকরা তাদের গচ্ছিত টাকা চাইলে দেই দিচ্ছি বলে তাদের লভ্যাংশ বা মূলধনের কোন টাকা দেওয়া হচ্ছে না। গ্রাহকদের টাকা উদ্ধারের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি এনজিও মালিকরা যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন, সমস্যার সমাধানের স্বার্থে গ্রাহক এবং এনজিও মালিকদের নিরাপত্তা দিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
এদিকে এনজিও পার্টনার মো. উজ্জ্বল মোবাইলফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে গ্রাহকদের জানান, তাদের এক বছরের সময় দিতে। উজ্জ্বল আশ্বাস দেন, সময় পেলেই সকল গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করা হবে।
উপজেলা সমবায় অফিসার মনজুরুল ইসলাম বলেন, ২০২৩/২৪ অর্থবছরে অডিট রিপোর্টে অসংগতি পাওয়ায় জেলা সমবায় অফিসকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘বিষয়টি অবগত হয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’