বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত সেই লামিয়া

পটুয়াখালী সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৯ পিএম

অবশেষে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের কন্যা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার লামিয়া। রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে সাতটার দিকে জানাজা শেষে পটুয়াখালীর পাংগাশিয়া ইউনিয়নে বাবার কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়।
জানাজায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত শনিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকার ৬ নম্বর রোডের একটি ভাড়া বাসা থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় লামিয়ার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রবিবার সকালে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হন লামিয়ার বাবা জসিম উদ্দিন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাকে দুমকি উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় লামিয়া। ধর্ষণের সময় তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলে অভিযুক্তরা। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়। মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় আসামি সাকিব ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।
পরিবারের দাবি, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর থেকেই লামিয়া গভীর মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। সামাজিক লজ্জা, অবহেলা এবং ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা তার মধ্যে চরম হতাশা তৈরি করে। সেই হতাশা থেকেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
তরুণীর চাচা মো. কালাম হাওলাদার জানান, ধর্ষণের পর আসামিরা হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে দিবে। হয়তো হুমকির কারণে আর সামাজিকভাবে অপমান সহ্য করতে না পেরে তার ভাতিজি আত্মহত্যা করেছে।
তিনি জানান, ‘আমাদের লামিয়া অত্যন্ত সাহসী মেয়ে ছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সে বুক চিতিয়ে লড়েছিল। কিন্তু বিচারহীনতার ভয়, সমাজের অবজ্ঞা ও মানসিক চাপ শেষ পর্যন্ত তাকে ভেঙে দিল। আজ সে চলে গেল। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করি।’
জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘মেয়েটাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ অপমান সইতে না পেরে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, ‘সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লামিয়ার ময়নাতদন্তের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।’