অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন
এএসপি পলাশের আত্মহননের ‘প্ররোচনা’য় স্ত্রীর বিচার দাবি

গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ০৯:৩১ পিএম

শোকাবহ পরিবেশ, স্বজনদের চোখের জল আর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হলো র্যাব-৭-এর সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহাকে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার মরদেহ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পারকোনা মহাশ্মশানে পৌঁছে দেওয়া হয়।
সেখানে তাকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার এবং র্যাব সদস্যদের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। গতকাল দুপুরে ওই শ্মশানে সম্পন্ন হয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া।
পলাশ সাহার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক। আত্মহত্যার প্ররোচনায় স্ত্রী সুস্মিতা সাহার বিচার দাবি করেছেন পলাশের স্বজনেরা।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে র্যাব-৬-এর কমান্ডার শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পলাশের গ্রামের বাড়ি, কোটালীপাড়ার তাড়াশী গ্রামে। সেখানে মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। মা আরতী রানী সাহা অভিযোগ করেন, স্ত্রীর নির্যাতনের কারণেই তার ছেলের এমন পরিণতি হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পলাশ ছিলেন ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স শেষে কর্মজীবন শুরু হয় সাব-রেজিস্ট্রার পদে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক, শিক্ষা ক্যাডার এবং সর্বশেষ পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পান। কর্মজীবনে পুলিশ বিশেষ শাখা (এসবি), শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সর্বশেষ র্যাব-৭ এ দায়িত্ব পালন করেন। মা ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে কর্মস্থলে থাকতেন। তাড়াশী গ্রামের বাড়িতে থাকেন তার বড় দুই ভাই লিটন ও নন্দলাল।
দুই বছর আগে পলাশ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা সুস্মিতা সাহার সঙ্গে। পরিবার জানায়, বিয়ের ছয় মাসের মাথায় শুরু হয় কলহ। স্ত্রী চাননি পলাশের মা একসঙ্গে থাকুক, যা নিয়ে প্রায়ই দাম্পত্যে উত্তেজনা তৈরি হতো।
পলাশের মেজো ভাই নন্দলাল সাহা বলেন, ‘আমাদের আদরের ভাইটা চলে গেল, আর আমাদের পরিবারকে নিঃস্ব করে গেল। স্ত্রীর প্ররোচনায় এই মৃত্যু হয়েছে বলে বিশ্বাস করি এবং তার বিচারের দাবি জানাই।’
প্রসঙ্গত, গত বুধবার চট্টগ্রামের চান্দগাঁও র্যাব-৭ ক্যাম্পে অভিযানের প্রস্তুতিকালে নিজের কক্ষে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় পলাশ সাহাকে। র্যাবের ধারণা, তিনি নিজের পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তার পাশে পাওয়া যায় একটি চিরকুট, যেখানে নিজের মৃত্যুতে কাউকে দায়ী না করে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব বণ্টনের কথাও লিখে যান তিনি।
চিরকুটে পলাশ লেখেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায়, ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।’