বিএসএফের ‘পুশইন’ চেষ্টা রুখে দিল বিজিবি-জনতা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে গভীর রাতে ‘৭৫০ জনকে’ বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার (পুশইন) চেষ্টা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফ। তবে বিজিবি ও স্থানীয় মানুষের কঠোর প্রতিরোধের মুখে তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাত ২টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে রাতভর সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করলেও পরিস্থিতি টের পেয়ে বিএসএফ সরে যাওয়ায় কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি বলে জানিয়েছেন বিজিবি-২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহাম্মেদ।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে ভারতে আটক ৭৫০ জনকে পুশইনের সিদ্ধান্ত নেয় সেখানকার সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে তাদের পুশইন করতে জড়ো করে বিএসএফ। খবর পেয়ে সতর্ক অবস্থান নেয় বিজিবি। যোগ দেয় স্থানীয় লোকজনও। ফলে পিছু হটতে বাধ্য হয় বিএসএফ।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর কালাছড়া ওয়ার্ডের সদস্য মো. ফরহাদ আলী বলেন, রাত ২টার দিকে বিজিবি সদস্যরা আমাদেরকে জানায় ৭৫০ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করে পাঠাবে বিএসএফ। পরে এলাকার মানুষকে নিয়ে সীমান্তে যেতে বলি। এ বিষয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে সিঙ্গারবিল, বিষ্ণুপুর, নলঘরিয়া, মেরাসানী, নোয়াবাদী সীমান্তে শত শত লোক দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়। তিনি আরও বলেন, অনেকে ফেসবুকে লাইভে এসেও মানুষকে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। পরে লোকজন জড়ো হলে বিএসএফ সরে যায়।
স্থানীয় আরেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মামুন চৌধুরী বলেন, বিএসএফ পুশইনের চেষ্টা করলে এলাকায় মাইকিং করা হয়। বিজিবির সহযোগিতায় লোকজন সীমান্তে গিয়ে জড়ো হয়ে তাদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করে। তবে কতজনকে সীমান্তে আনা হয়েছিল সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।
বিষ্ণুপুর বিজিবি ক্যাম্পের (সুবেদার) শরিফ মাহাবুব বলেন, গোপন তথ্যে জানতে পারি বিএসএফ ৭৫০ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করাবে। এই খবরে সীমান্ত এলাকার সবাইকে নিয়ে মাইকিং করিয়ে বিএসএফের অপতৎপরতা রুখে দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
বিজয়নগর থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাধনা ত্রিপুরা বলেন, পুশইন চেষ্টার খবরে জনগণ বিজিবির সঙ্গে থেকে প্রতিহত করেছে। এখনও সতর্ক অবস্থানে আছেন সবাই।
বিজিবি-২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহাম্মেদ বলেন, পুশইন ও মাদক কোনোভাবেই বাংলাদেশে আসতে পারবে না। এ ব্যাপরে বিজিবি সবসময়ই সতর্ক অবস্থায় আছে। তবে বিএসএফ কতজনকে পুশইনের চেষ্টা করেছে সেই সংখ্যাটি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি এই বিজিবি কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, ৪ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের পাঁচ জেলার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ৩১৮ জনকে পুশইন খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪ মে মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে, ৭ মে খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরা দিয়ে যথাক্রমে ৬৬ ও ৭৮, মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে (৭, ৮, ১৪ ও ১৫ মে) ১৪৮ এবং ১৪ মে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে পুশইন করা হয়।