পুলিশ বলছে আত্মহত্যা, পরিবারের দাবি পরিকল্পিত খুন
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৩ পিএম
ছবি-সংগৃহীত
কুষ্টিয়ায় আমিরাত লুবে অয়েল (মবিল) কোম্পানীর কর্মী জাহাঙ্গীর আলমকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তারই এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ঘটনাটিকে নিশ্চিতভাবে আত্মহত্যা বলছে পুলিশ। কুষ্টিয়ায় মডেল থানা পুলিশ এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলাও ঋজু করেছে।
এদিকে ময়নাতদন্ত রিপোর্টটি সঠিক নয় দাবি করে কোম্পানীর মার্কেটিং ও সেলস ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান জাহিদকে আসামি করে কুষ্টিয়ার আদালতে একটি হত্যা মামলা করেছে মৃত জাহাঙ্গীরের পরিবার।
কুষ্টিয়ার সিনিয়র চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আমলী আদালতে মামলাটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রউফ।
জাহাঙ্গীরের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার লাউখুলা দিগরবাইদ গ্রামে। তিনি কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুরে গির্জানাথ মজুমদার লেনের বাড়িতে স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যাসহ ভাড়া থাকতেন।
আদালতে দায়ের করা মামলার বাদি জাহাঙ্গীর আলমের চাচা আবু হানিফ মিয়া বলেন, ‘আমার ভাইপোকে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুনিরা হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরের মরদেহ ঝুলিয়ে দেয়। হত্যাকান্ডের আগে একটি অনৈতিক বিষয় মেনে না নেওয়ায় কোম্পানীর মার্কেটিং ও সেলস ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান জাহিদের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের মতবিরোধ হয়। জাহাঙ্গীর আমাকে বিস্তারিত জানায়। আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম অতি দ্রুত কুষ্টিয়া ছেড়ে ঢাকায় চলে আসতে। এরই মাঝে জাহাঙ্গীরকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে তারা।’
নিহতের স্ত্রী রুবিনা খাতুন বলেন, ‘গত ৬ মার্চ বুধবার সকাল ৯টায় আমি জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়ে কুষ্টিয়া ভেড়ামারা সড়কস্থ ব্লু-বার্ড কিন্ডার গার্টেন স্কুলে বড় কন্যা জাফরিনকে আনতে যায়। আমাকে স্কুলে রেখে স্বামী জাহাঙ্গীর তার বস জাহিদ সাহেবের সঙ্গে অফিসের কাজে যাওয়ার কথা বলে চলে যায়। পরে বেলা পৌনে ১২টায় আমার ৬ মাস বয়সী শিশুকন্যা জারাকে কোলে নিয়ে বড় মেয়ে জাফরিনকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসি। বাসায় এসে দেখতে পায় শুধু বারান্দার গ্রিল গেটের বাইরে থেকে তালা ঝুলছে এবং ঘরের দরজা বাহির থেকে টেনে ভেড়ানো এবং ভিতরের দিকে একটি চেয়ার ভেড়ানো ছিলো। ঘরের ভিতরে ঢুকে স্বামীকে ডাকাডাকি করতে থাকি কিন্তু কোন সাড়া পায়নি। পরে খুঁজতে খুঁজতে ফ্রিজের পাশে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে তড়িঘড়ি করে বটি দিয়ে কেটে নামিয়ে জাহিদ নামে জাহাঙ্গীরের এক সহকর্মী বন্ধুর সাহায্যে একটি ভ্যানযোগে দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তার আমার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করে। এসময় জাহাঙ্গীরের নাক মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল।
অভিযুক্ত আমিরাত লুব ওয়েল কোম্পানীর মার্কেটিং ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান জাহিদ কুষ্টিয়াতে না থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মৃত জাহাঙ্গীরের ময়নাতদন্তকারী কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের মরদেহ দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা জনিত মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এর বাইরে আরও কোন ঘটনা বা ক্যামিকেল প্রয়োগ জনিত মৃত্যু হয়ে থাকলে সে বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার মতো ক্লিনিক্যাল কোন আয়োজন আমাদের জেলা পর্যায়ে নেই। তবে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে সেগুলির পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সঠিক কারণ উদ্ঘাটন হওয়া উচিত।’
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, ‘সুরুত হাল রিপোর্ট ও ময়না তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী জাহাঙ্গীরের মৃত্যু আত্মাহত্যা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।’