Logo
Logo
×

সারাদেশ

বিনামূল্যেই চোখের আলো ফিরে পাচ্ছেন তারা

Icon

মোংলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ০৫:০৪ পিএম

বিনামূল্যেই চোখের আলো ফিরে পাচ্ছেন তারা

চোখের চিকিৎসা নিচ্ছেন এক রোগী

রাবেয়া বেগম দীর্ঘদিন চোখে দেখতে পান না। অন্যের কাঁধে ভর করে চলাফেরা করতে হয়। চিকিৎসা করাতে পারলে তিনি ফিরে পাবেন দুই নয়নের আলো। কিন্তু দরিদ্রতার কারণে সেটি সম্ভব না। বিনামূল্যে সেবাসহ চোখের সকল প্রকার চিকিৎসা করাচ্ছেন লায়ন ফরিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। মাইকে এ খবর শুনে গতকাল শুক্রবার ভোরেই তার ছেলে মিকাইল সরদারের হাত ধরে বেরিয়ে পড়েন।

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার দক্ষিণ চাঁদপাই গ্রাম থেকে রামপাল উপজেলার বড়দিয়া এলাকায় ছুটে আসেন তিনি। এসে দেখেন তার মতো শত শত নারী-পুরুষ চোখের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ সময় তিনি দেখতে পান কয়েকজন তরুণ চিকিৎসক যত্ন করে রোগী দেখছেন। বিনামূল্যে আধুনিক চিকিৎসা এবং চিকিৎসাপত্রে ওষুধ লিখে নিয়ে চোখে-মুখে হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন কয়েকজন। এসব দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন এই নারী।

সরেজমিনে রামপালের বড়দিয়া গ্রামে গেলে কথা হয় এই রাবেয়া বেগমের সঙ্গে। এ সময় কথা হয় সখিনা বেগম, রজ্জব আলী মোড়ল, আবু বক্কর সিদ্দিক শেখ, দীন মোহাম্মদ, গোনজেরা বেগমসহ কয়েকজনের সঙ্গে। যাদের বেশিরভাগই বয়স্ক, দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ। ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের উদ্যোগে এবং দৃষ্টি উন্নয়ম সংস্থা ও লায়ন শেখ ফরিদুল ইসলামের সহযোগিতায় তিন হাজার মানুষকে বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। বড়দিয়া হাজী আরিফ (রহ.) মাদ্রাসার মাঠে এই সেবা প্রদান করা হয়। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শত শত মানুষ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা সুশৃঙ্খলভাবে তাদের নির্দিষ্ট বুথে পৌঁছে দিচ্ছেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে করা হচ্ছে মাইকিং। মোট ৪টি বুথে এই আই ক্যাম্পের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

রামপাল উপজেলা ছাড়িয়ে মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট জেলা থেকেও মানুষজন এসেছেন। পাঁচজন চিকিৎসকসহ ১৫ জনের একটি বিশেষজ্ঞ টিম এখানে সেবা দিতে আসেন। এ সময় উপস্থিত থেকে সেবা দেওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি লায়ন শেখ ফরিদুল ইসলামকে। তিনি বলেন, ‘জীবনবোধের চিন্তাভাবনা থেকে এই সেবামূলক কার্যক্রম করছি। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবামূলক কার্যক্রম করছি।’

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চারটি ক্যাম্প করেছি এখানে। আরও দুটি ক্যাম্প করার ইচ্ছে আছে আমাদের। তাহলে পুরো উপজেলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে বিনামূল্যের এই সেবা পৌঁছে যাবে।’ ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার মানুষের চোখের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ৬ হাজার ২০০ জনের অপারেশন করা হয়েছে বলেও জানান শেখ ফরিদুল ইসলাম।

উপজেলার সোনাইলতলা গ্রামের রজ্জব আলী মোড়ল বলেন, অনেক দিন চোখ নিয়া কষ্টে ছিলাম। টাকার জন্য ডাক্তার দেখাতে পারিনি। তারপর এখানে এসেছি। ডাক্তার সাহেবরা ভালোভাবে আমার চোখ দেখছে। এখন বলেছে, আমার চোখের ছানি অপারেশন লাগবে। তারা নিজেরাই আমাকে নিয়ে গিয়ে অপারেশন করিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেবে।

রামপাল উপজেলার মর্জিনা বেগম বলেন, ‘টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না। আজকে বড় ডাক্তাররা বিনা টাকায় সেবা দিছে, আবার ওষুধও দিছে।’ বাঁশতলী গ্রামের গোনজেরা বেগম বলেন, ‘চোখে ছানি পড়ছে। ডাক্তাররা বলছে, ঢাকায় নিয়ে অপারেশন করাবে। আমার বাড়িতে দিয়ে যাবে। সব খরচ তাদের।’

আই ক্যাম্পের চিকিৎসক এসএন সাহা বলেন, ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের ডাকে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছি। দেশের অনেক জায়গায় আই ক্যাম্প করেছি। তবে রামপাল উপজেলায় বেশি সাড়া পেয়েছি। চিকিৎসা নিয়ে এ এলাকার মানুষের আগ্রহ দেখে ভালো লেগেছে। ক্যাম্পে যেসব রোগীর অস্ত্রোপচার দরকার, তাদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের ঢাকা দৃষ্টি আই হাসপাতালে বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করানো হবে। তাদের আসা-যাওয়াসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয়ভার বহন করবে ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাব।

 

ইশা ফাউন্ডেশনের একটি প্রকাশনা

অনুসরণ করুন