আনন্দ আয়োজনে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন
চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ০৬:২৫ পিএম
চট্টগ্রাম ও রাঙামাটিতে উদযাপিত হয়েছে বুদ্ধপূর্ণিমা
অহিংসা ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন গৌতম বুদ্ধ। সেই বাণীকে ধারণ করে চট্টগ্রাম ও রাঙামাটিতে উদযাপিত হয়েছে বুদ্ধপূর্ণিমা। বুধবার আনন্দ আয়োজনে উদযাপিত হয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বড় এ উৎসব।
চট্টগ্রাম মহানগরীসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল- শান্তি শোভাযাত্রা, প্রদীপ প্রজ্বালন, বুদ্ধ পূজা, সীবলী পূজা, অষ্টপরিষ্কারসহ সংঘদান, আলোচনা সভা ও বুদ্ধ কীর্তন। ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’ তথাগত বুদ্ধের আড়াই হাজার বছর আগের সেই অমিয় বাণীকে ধারণ করে মহানগরীর নন্দনকাননে চট্টগ্রাম বৌদ্ধবিহারে প্রফেসর ড. জিনবোধি মহাথের, কাতালগঞ্জ নবপণ্ডিত বিহারে ড. উপানন্দ মহাথের, দেবপাহাড় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে আর্যপ্রিয় মহাথের, চান্দগাঁও সার্বজনীন শাক্যমুনি বিহারে এস লোকজিৎ মহাথের, ইপিজেড সার্বজনীন বৌদ্ধবিহারে অধ্যাপক জ্ঞানরত্ন মহাথেরোর সভাপতিত্বে নানা ধর্মীয় কার্য সম্পন্ন হয়।
বিকালে চট্টগ্রাম বৌদ্ধবিহার ও কাতালগঞ্জ নবপণ্ডি বিহারে
গিয়ে দেখা যায়, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নানা বয়সি নারী-পুরুষের সমাগম। বিহারে আসা দায়ক-দায়িকা
ও উপাসক-উপাসিকারা বুদ্ধের উদ্দেশে প্রদীপ প্রজ্বালন শেষে মূর্তির সামনে নতশিরে বন্দনা
করছেন। পরে বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষুসংঘদের নানা দ্রব্য দান করছেন। এ সময় ভিক্ষুদের
উপাসক-উপাসিকাদের অষ্টশীল ও পঞ্চশীল প্রদান করতেও দেখা যায়।
এ ছাড়া
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বিকালে বর্ণাঢ্য শান্তি শোভাযাত্রা বের করে সম্মিলিত
বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন পরিষদ ও চট্টগ্রাম বৌদ্ধবিহারের (সাংঘিক) ভিক্ষু সংঘ।
নন্দনকানন বৌদ্ধবিহারের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে জামালখানের চট্টগ্রাম
প্রেস ক্লাব, আন্দরকিল্লা হয়ে আবার নন্দনকানন এসে শেষ হয়।
বুদ্ধপূর্ণিমার তাৎপর্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাতালগঞ্জ
নবপণ্ডিত বিহারের অধ্যক্ষ ড. উপানন্দ মহাথের বলেন, ‘ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা
আজ। এই পূর্ণিমা তিথিতেই সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্ম, তথাগত গৌতম বুদ্ধের বুদ্ধত্ব লাভ ও
মহাপরিনির্বাণ ঘটেছিল। তাই দিনটি আমাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যময়।’
এদিকে খাগড়াছড়িতেও দিনটি উপলক্ষে বিশ্বশান্তি কামনায় বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘ
দান, অষ্টপরিষ্কার দান, হাজার
প্রদীপ প্রজ্বালনসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া বুদ্ধের বাণী ছড়িয়ে দিতে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য শান্তি শোভাযাত্রারও। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা স্নান
করে শুচিবস্ত্র পরিধারণ করেন। মন্দিরে মন্দিরে চলে বুদ্ধের বন্দনা। অর্চনার পাশাপাশি
পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ ও সমবেত প্রার্থনায় স্মরণ করা হচ্ছে বৌদ্ধ
ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধকে।
শহরের য়ংড বৌদ্ধবিহার, ধর্মপুর বৌদ্ধবিহারসহ বিভিন্ন বিহারে সকাল থেকে বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ, বৌদ্ধভক্তরা হাতে নানা রকমের ফলমূল, ফুলসহ সোয়াইং পূজা নিয়ে আসতে থাকেন। তারা প্রদীপ প্রজ্বালন, প্রার্থনাসহ রোগ-শোক থেকে মুক্তি, দেশ ও বিশ্বশান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন। এ ছাড়া ধর্মীয় দেশনা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল দান, সংঘ দানসহ নানাবিধ দান অনুষ্ঠিত হয়।
বিকালের আয়োজন করা হয় বর্ণিল শোভাযাত্রার। শোভাযাত্রায় পুলিশ সুপার মুক্তা ধর, মং রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী, মারমা ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ম্রাসাথোয়াই মারমা, য়ংড বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত ক্ষেমাসারা থেরো, থুয়াইলা প্রু চৌধুরী, বিভিন্ন বিহারের অধ্যক্ষসহ বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা অংশগ্রহণ করেন।