Logo
Logo
×

শিক্ষা

শিক্ষার্থীরা না চাইলেও পদত্যাগ করেছেন খুবি উপাচার্য

Icon

খুলনা সংবাদদাতা

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৩৯ পিএম

শিক্ষার্থীরা না চাইলেও পদত্যাগ করেছেন খুবি উপাচার্য

ছবি-সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় শিক্ত এবং সকলের বাঁধার পরও পদত্যাগ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো পদত্যাগপত্রে তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করেন।

এর আগে দুপুরে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

একই সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী। এ ছাড়া পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হলের প্রভোস্ট, সিন্ডিকেটের দুই সদস্য, শারীরিক শিক্ষা চর্চা বিভাগের পরিচালক, আইকিউএসির পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক।

বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পদত্যাগের আগে উপাচার্য ড. মাহমুদ হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব না। গতকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় যে লেখালেখি শুরু হয়েছে, আমার সম্মানহানি হচ্ছে, আমি সম্মানহানি আর নিতে পারছি না। সবকিছুর আগে আমার সম্মান, আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও। আমি চাই না, তোমরা আর কোনও ধরনের কিছু করো। তোমরা সবাই ক্লাসে ফিরে যাও।’

এর আগে এক বদলির আদেশে জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. মঈনুল হোসেন, উপাচার্যের সচিব সঞ্জয় সাহা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. হাসানুজ্জামানসহ ১৩ কর্মকর্তাকে কর্মস্থল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য দফতরে বদলি করা হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এই পদত্যাগকে অনেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিনা মেঘে বজ্রপাত হিসেবে দেখছেন কর্মরত এবং সাবেক অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, অবরুদ্ধ রাখা, কার্যালয়ে তালাবন্ধ করে রাখার মতো ঘটনা ঘটলেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ব্যতিক্রম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ চাননি। বরং তারা উপাচার্য যেন পদত্যাগ না করেন সেই দাবি করে আসছিলেন। হঠাৎ উপাচার্যের পদত্যাগের খবরে বিশ্ববিদ্যালয় যেন হতাশার ছায়া নেমে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী সাদিয়া উপাচার্যের পদত্যাগের খবরে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো ভাবতেই পরছি না! স্যার, ওরিয়েন্টেশনের দিনে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং একটি সেশন পরিচালনা করেছিলেন তা আমার জীবনে বড় পাওয়া। আমি কখনও তা ভুলিনি। তার সেই মোটিভেশনাল স্পিচ আমার জীবনের অনেক কিছুর মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। স্যার ভিসি হয়ে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকলেও ক্লাস নিতেন। ঠিক ৯টার এক-দু মিনিট আগে ক্লাসে ঢুকতেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী ফারহানা ইয়াসমিন আশা উপাচার্যের পদত্যাগের খবরে বলেন, ‘আমি মর্মাহত। কারণ, স্যার এই কোটা আন্দোলন অত্যন্ত সুন্দরভাবে সামলেয়েছেন। তিনি ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করতে দেননি। তিনি যা করেছেন তা আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারেনি। তিনি সারা দেশে ভিসিদের মধ্যে উদাহরণ। তিনি খুবই ভালো শিক্ষক, গবেষক। আমি তার পদত্যাগের বিষয়টি মেনেই নিতে পারছি না।’

সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী বলেন, ‘উপাচার্য হিসেবে প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করার অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন।’

সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সাইফুদ্দিন শাহ্ বলেন, ‘উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ওবিই কারিকুলাম প্রবর্তন এবং পিএইচডি গবেষণায় গুরুত্ব প্রদানে আমার কর্মমেয়াদে যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম তিনি সেক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছেন। আইকিউএসিকে অত্যন্ত শক্তিশালী করেছেন। সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে গেছেন। আমি তার পদত্যাগ প্রত্যাশা করি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেবল শিক্ষা গবেষণা ও অবকাঠামোগতভাবেই এগিয়ে নেওয়া নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অবস্থান করে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি পরিবারের মতো পরিবেশ সৃষ্টিতে অবদান রেখেছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তার একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সবার আস্থার সৃষ্টি হয়। আর এ কারণেই ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পরিস্থিতিতেও একমাত্র খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই রয়েছে রক্ষিত, যেখানে একটি ঢিলও ছোড়েনি কেউ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।’

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৫ মে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদান করেন প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। 

ইশা ফাউন্ডেশনের একটি প্রকাশনা

অনুসরণ করুন