ছবি-সংগৃহীত
মানুষের বয়স তো বাড়বেই। একে থামানো বা নিয়ন্ত্রণ কারও হাতেই নেই। কিন্তু নির্দিষ্ট একটা বয়স পার হয়ে মধ্য বয়সে এলে শরীর, স্বাস্থ্য ও মন সবকিছুতেই পরিবর্তন আসে। সাধারণত ৪০ থেকে ৬০, অথবা ৪০ থেকে ৬৫। এই বয়সকে মধ্য বয়স বলে গণ্য করা হয়। মধ্যবয়সে পৌঁছালে অনেকেই বয়স বেড়ে যাওয়া এবং সেইসাথে নানা জটিলতা নিয়ে উদ্বেগে থাকেন।
অনেকেই মনে করেন কে কতো বছর বাঁচবেন তা নির্ভর করে জিনের ওপর। কিন্তু গবেষণা বলছে এর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবেশের ওপর নির্ভর করে, যেটি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আর তাই সুস্থভাবে বেশিদিন বাঁচতে, বয়সকালে অসুস্থ না থেকে হাসি খুশি ও স্বাধীনভাবে জীবন কাটাতে কয়েকটি দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
হাসি-খুশি থাকা
হাসলে আমাদের মানসিক চাপ কমে যায়। সেটি নার্ভাল সিস্টেম সংক্রান্ত চাপ হোক বা হরমোন সংক্রান্ত চাপ। গবেষণায় দেখা গেছে স্ট্রেস বা উদ্বেগে ভুগছেন এমন নারীদের হৃদরোগ, স্ট্রোক বা ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা দুই গুণ বেশি এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে তিনগুণ বেশি। কিন্তু হাসি ও আশাবাদী মনোভাব মানসিক চাপ কমায়। এতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
সুখী ব্যক্তিদের অকালে মৃত্যু হার বাকিদের তুলনায় তিন দশমিক শতাংশ কম। সুখী লোকেরা তাদের চেয়ে কম সুখীদের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি বাঁচতে পারে। আর তাই সুখী হতে নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করতে পারেন। ভালো লাগার মানুষের সাথে সময় কাটাতে পারেন। তাই পরিস্থিতি যেমনই হোক, আপনার বয়স যতোই হোক 'হাসুন'। হাসির চেয়ে ভালো ওষুধ নেই। এটি আপনাকে দীর্ঘজীবী করবে। ইতিবাচক ও আশাবাদী থাকার আরেকটি উপায় হলো প্রার্থনা করা।
পর্যাপ্ত ঘুম
মধ্যে বয়সে প্রতি রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া ভীষণ জরুরি। সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম হলো আদর্শ। এর চেয়ে কম ঘুম বা এর চেয়ে বেশি ঘুম আমাদের মস্তিষ্ক ও হার্টের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলে। ঘুমের সময় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইনট্রিগ্রেন নামে এক ধরনের আঠালো পদার্থ নিঃসরণ করে। এই ইনট্রিগ্রেন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে টি সেলসকে সাহায্য করে।
সুষম খাবার
পুষ্টিবিদদের মতে, মধ্য বয়সীদের নিয়মিত ডায়েটে শস্য, বাদাম, শাকসবজি, ফল এবং পরিমিত পরিমাণে মাছ রাখা উচিত। পাশাপাশি চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া বন্ধ করা উচিত। খাদ্যাভ্যাসের এই পরিবর্তন গড় আয়ু ১০ বছর বাড়াতে পারে।
এছাড়া এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা ক্যালোরি কমানোর ডায়েট করেন তাদের কোষে ফ্রি র্যাডিকেল তৈরি হতে পারে না, এতে কোষ সুস্থ থাকে। সেইসাথে ডিএনএ মেরামত হতে থাকে। যা শতবর্ষী মানুষদের খুব সাধারণ বৈশিষ্ট্য। বয়সকালে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়, এতে তাদের দেখতেও বয়সের তুলনায় তরুণ লাগে। অবশ্যই ধূমপান, মদ পান, মাদক সেবনকে মধ্য বয়স থেকে না করতে হবে।
ঠান্ডা পানিতে গোসল
প্রতিদিন সকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল, কিংবা ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কাটা হরমায়েসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের কোষে বয়স বাড়ার গতি কমিয়ে দেয়। এতে ভালো কোষের সংখ্যা বাড়ে, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে, ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমবে, মন প্রশান্ত ফুরফুরে থাকে। যা দীর্ঘায়ুর অন্যতম নির্দেশক।
ব্যায়াম
আয়ু বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম কিংবা কায়িক পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। এতে মূলত হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও পেশির সক্ষমতা বাড়ে। ফলে ডায়াবেটিস, স্থূলতা থেকে দূরে থাকা যায় এবং আয়ু বাড়ে। মধ্য বয়সের পর নিয়মিত হার্ট, ফুসফুস ও পেশির সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যায়াম করা উচিত। দ্রুত হাঁটা বা ভারোত্তোলনের মাধ্যমে এসব ব্যায়াম করা যায়। গড়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উচিত হবে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা।
বন্ধুত্ব
বিশেষজ্ঞদের মতে সুস্থভাবে দীর্ঘ সময় বাঁচতে বন্ধু থাকা খুব জরুরি। দীর্ঘজীবী হওয়ার জন্য ব্যায়াম, সুষম খাবার এবং ধূমপান পরিহার যেমন জরুরি, বন্ধুত্বের গুরুত্ব ঠিক তেমনই। কারণ ভালো বন্ধু মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, তার প্রভাবে আয়ুও বাড়ে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী রাখা উচিত। এতেও শরীর ও মন ভালো থাকে। তবে মনে রাখবেন সেরা বন্ধু রাতারাতি হয় না এবং সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা