ছবি-সংগৃহীত
দেশের অন্যতম গুণী রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদ মারা গেছেন। বু্ধবার (১৩ মার্চ) রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তার ছোট ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ বলেন, ‘আজও তানপুরা নিয়ে বড় ভাই সংগীত চর্চা করেছেন। সন্ধ্যায় তাঁর ঘর ভেতর থেকে দরজা বন্ধ ছিল। ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করি।’
সাদি মহম্মদের পারিবারিক বন্ধু নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা বলেন, ‘গত বছর ৮ জুলাই সাদী মহম্মদের মা (জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ) মারা যান। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই একটা ট্রমার মধ্যে চলে যান তিনি। ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না মানসিকভাবে। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত সাদী মহম্মদ নিতে পারেননি। গেল কয়েকদিন ধরে অসুস্থও ছিলেন। চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সম্প্রতি খানিকটা সুস্থ হয়েছিলেন। আজ (বুধবার) রোজা রেখেছিলেন। ইফতারও করেন। এরপরই আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
সাদি মহম্মদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক স্বাগতিক লোহানী বলেন, সন্ধ্যা ৮টার দিকে তাঁকে আনা হয়েছে। ওনার শরীরে আঘাতে কোনো চিহ্ন নেই। তবে ফাঁস দিলে গলায় যে দাগ থাকে সেটা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে, তিনি ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ লাশ হিমঘরে থাকবে। বৃহস্পতিবার বাদ আছর তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তাঁর ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক ছিলেন।
২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ২০১২ সালে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত করে।
১৯৭১ সালে সাদি মহম্মদের বাবা সলিমউল্লাহকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হত্যা করে। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান সলিমউল্লাহ। আর সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদী-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ।
সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিমউল্লাহকে।
তাঁর বাবার নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়েছে। সাদি মহম্মদের ভাই শিবলী মহম্মদ প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী।