বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তরের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে নাগরিকদের মতামত ও আপত্তি জানানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বগুড়া সিটি করপোরেশনের স্বীকৃতি পেলে এটি দেশের ১৩তম সিটি করপোরেশন হবে।

বগুড়া পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাসুম আলী বেগ বলেন, ‘গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর এখন ৩০ দিনের মধ্যে কেউ চাইলে মতামত ও আপত্তি দিতে পারবে। আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত ১৫ দিন সময় লাগবে। সব মিলিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বগুড়া সিটি করপোরেশন গঠনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি প্রাথমিক প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। ১০ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিটি করপোরেশন-২ শাখা থেকে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয়।

২০০৪-০৫ সালের দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশেষ আগ্রহে বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিএনপি সরকারের আমলে বগুড়া পৌরসভাকে ২১টি ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়।

বর্তমানে পৌরসভার আয়তন ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার এবং শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ ৫০ হাজার। সরকারি রাজস্ব আয়, জনসংখ্যা ও আয়তনের সব শর্ত পূরণ করলেও এতদিন সিটি করপোরেশন ঘোষণার অপেক্ষায় ছিল বগুড়াবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বগুড়াকে সিটি কর্পোরেশনের মর্যাদা দেয়নি। তারা জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদিচ্ছায় এই উদ্যোগ নতুন করে গতি পেয়েছে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রকৌশলী সাহাবুদ্দীন সৈকত বলেন, ‘সিটি করপোরেশন বাস্তবায়িত হলে বগুড়ায় শিক্ষাক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসবে।’ বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. সাইরুল ইসলাম বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও গতিশীল হবে। আমরা চাই দক্ষ ও উন্নয়নমনস্ক নেতৃত্ব আসুক।’

বগুড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম খায়রুল বাশার বলেন, ‘দীর্ঘদিন পিছিয়ে থাকা বগুড়ায় এখন উন্নয়নের ছোয়া লাগতে শুরু করেছে। মূলত সিটি করপোরেশন ঘোষণা বিএনপির পরিকল্পনা ছিল। সেটাই এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে বগুড়া বারবার অবহেলিত হয়েছে। বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকার ইচ্ছা করেই এই জেলার কোনও উন্নয়ন করেনি। সিটি করপোরেশন হওয়ায় বগুড়া প্রাণ ফিরে পাবে, এটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’

জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, মৌজাভিত্তিক জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জনমত যাচাই শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে দ্রুতই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সিদ্ধান্ত আসতে আর বেশি সময় লাগবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।