এমপি আনার হত্যা রহস্য
ডাক্তার দেখাতে বের হয়ে দিল্লিতে?
সমাচার প্রতিদিন ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ মে ২০২৪, ০৬:২৭ পিএম
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম
কলকাতার সিঁথি অঞ্চলের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস জানান, আনোয়ারুল আজীমের সঙ্গে দু'দশকেরও বেশি সময় ধরে তার পারিবারিক সম্পর্ক। কলকাতার গোপাল বিশ্বাসের গহনা রফতানির ব্যবসা আছে। গোপাল বিশ্বাস বলছিলেন, ‘এবারে তিনি এসে আমাকে বলেছিলেন যে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাবেন। কোন ডাক্তার ভালো হবে, সেটাও জানতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমার জানাশোনা কোনও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ নেই, তাই আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম সল্ট লেকের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারেন’।
তিনি জানাচ্ছিলেন, দুই আড়াই দশকের বন্ধুত্ব সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের সঙ্গে। ‘বাংলাদেশে বিএনপির জমানায় ও ভারতে থাকত। আমাদের বাড়ি মাঝদিয়ায়। সেখানে সুভাষ আগরওয়ালের বাড়িতে থাকত আনার। আমার সঙ্গে সেখানেই পরিচয়, তারপরে বন্ধুত্ব। সম্পর্কটা এখন পারিবারিক স্তরে চলে গেছে,’ জানালেন গোপাল বিশ্বাস। সে কারণেই চিকিৎসা করাতে এসে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ারুল আজীম।
সেদিন দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরে মি. আজীম যে ভাড়াচালিত গাড়িতে উঠেছিলেন সেটির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এরপর গোপাল বিশ্বাসকে পুলিশ জানিয়েছে, মি.আজীমের সাথে আরেকজন বাংলাদেশি নাগরিককে নিউ টাউন অঞ্চলে ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন ওই চালক।
এরপর ১৫ই মে সকালে গোপাল বিশ্বাস মি. আজীমের কাছ থেকে আবারও একটি হোয়াটস্অ্যাপ মেসেজ পান যে তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং তার সঙ্গে ‘ভিআইপিরা’ আছেন, তাই তাকে যেন ফোন না করা হয়।
এর দু'দিন পরে, ১৭ই মে গোপাল বিশ্বাসকে মি. আজীমের মেয়ে ফোন করে জানান যে তার বাবার সঙ্গে কিছুতেই তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না। ‘সে খবর জানতে পেরে কলকাতায় ওর যত ঘনিষ্ঠ মানুষ আছেন বলে আমি জানি, সবাইকে বিষয়টা জানাই। তারাও খোঁজ খবর করতে শুরু করেন। কিন্তু কোনোভাবেই আজীমকে ফোনে পাওয়া যায়নি,’ বলছিলেন মি. বিশ্বাস। পরের দিন, ১৮ই মে বরাহনগর থানায় যান তিনি।
মি. বিশ্বাস বলছিলেন, ‘সেখানে আমাকে সারাদিন বসিয়ে রাখা হয়। পুলিশ আমার বাড়িতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। সেসব খতিয়ে দেখে আমার নিখোঁজ ডায়েরি নেওয়া হয়। তারা ওই ভাড়ার গাড়িটির নম্বরও পেয়ে যায়। চালকের সঙ্গে কথা বলেছে। নিশ্চয়ই পুলিশ খোঁজখবর করছে, আমাকে তো আর সব তথ্য জানাচ্ছে না।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস যে তথ্য পেয়েছিল, সে অনুযায়ী ১৭ই মে মি. আজীমের মোবাইল নম্বরটি কিছুক্ষণের জন্য বিহারে অবস্থান করছিল। আবার এটাও জানতে পেরেছে তারা যে মোবাইল সেট থেকে সিম কার্ডটি আলাদা করে রাখার কারণে সঠিক অবস্থান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগে, ঢাকায় ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘তার দুটি বাংলাদেশি নম্বর আছে আর একটি ভারতের নম্বর। আমরা ভারতীয় পুলিশের সহযোগিতায় তার ভারতীয় নম্বরটি দেখলাম মুজাফফরাবাদ অর্থাৎ বিহারের দিকে।’ ঘটনাচক্রে বিহারে মুজাফফরাবাদ নামের জায়গা নেই। পাকিস্তান শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানীর নাম মুজাফফরাবাদ, আর প্রায় কাছাকাছি যে নামের জায়গা বিহারে আছে, সেই জায়গার নাম মুজফ্ফরপুর।
ডিবির প্রধান সেদিন জানিয়েছেন, ‘আমরা বিষয়টার খোঁজখবর রাখছি। ভারতের যারা বাংলাদেশে আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলছি, আবার ভারতীয় পুলিশের সঙ্গেও কথা বলছি। উনার পরিবারও যোগাযোগ রাখছে আমাদের সঙ্গে। তার মেয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন।’ ডিবি কার্যালয়ে বাবার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন সংসদ সদস্যের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।