বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, এটিইউ প্রধান এস এম রুহুল আমিন, অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান -ছবি সংগৃহীত
কয়েকদিন পরই বাংলাদেশ পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নিয়োগ পাবেন। কিন্তু সেই পদে কে বসবেন, কে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন এ নিয়ে চলছে গুঞ্জন। কারণ আগামী ১১ জুলাই চাকরির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের মেয়াদ। বর্তমান আইজিপির মেয়াদ গত বছরের ১২ জানুয়ারিতে শেষ হয়েছিল। কিন্তু পরে তার মেয়াদ বাড়ানো হয় চুক্তির মাধ্যমে। এরপর তাকে দেড় বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সরকার। এমন চুক্তিতে নিয়োগের ঘটনা পুলিশে বিরল হলেও ওই সময় নানা কারণে তাকে সরকার নিয়োগ দেন। শেষ পর্যন্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চাকরির মেয়াদ যদি ফের বাড়ে এটি হবে দ্বিতীয় দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। তবে নতুন করে তাকে আবারও চুক্তিতে নিয়োগের সম্ভাবনা এবার কম। ফলে তার চলে যাওয়ার আগের দিন পরবর্তী পুলিশ প্রধান হিসেবে কাউকে নিয়োগ দিতে হবে।প্রায় দেড় লাখ জনবলের পুলিশ বাহিনী কে নেতৃত্ব দেবেন তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। কারণ ইতোমধ্যে তার স্থলে বসার জন্য আরও কয়েকজন অপেক্ষায় আছেন। যারা মেধা, প্রজ্ঞা, কর্মদক্ষতা, পরীক্ষিত, পেশাদারিত্ব সহ যোগ্যতাতেও কম নয়।
আইজিপি হতে হলে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে থাকতে হয়। আর এমন প্রতি বছর সাতজন থাকেন। তবে সাতজনের মধ্যে কেউ কেউ আবার বিভিন্ন বাহিনী বা বিভাগের প্রধান হয়ে যান।
পুলিশের একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের আর্থিক অনিয়ম ও দূনীতির নানা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা ও তদন্তের কারনে খোদ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে নানা আলোচনা চলছে। যা নিয়ে খোদ পুলিশ কর্মকর্তারা বিব্রত। এই সব কারণে এবার নতুন আইজিপি নিয়োগে ক্লিন ইমেজের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এবার নতুন আইজিপি হিসাবে যারা আলোচনায় রয়েছেন তাদের মধ্যে এগিয়ে ১২তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ও এন্টিটেররিজম ইউনিটের প্রধান এস এম রুহুল আমিন।
এটিইউ প্রধান এস এম রুহুল আমিন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকসহ (সম্মান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা মেধাবী ছাত্র এস এম রুহুল আমিন ১৯৯১ সালে ১২তম বিসিএস পুলিশে তার ব্যাচে প্রথম স্থান অধীকার করেন । তিনি মিলিটারি বেসিক TRG কোর্সে সেরা ছাত্রের উপাধি লাভ করে সেরা অলরাউন্ডার প্রদর্শনকারীর সম্মাননা লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধীনে ফাউন্ডেশন TRG কোর্সে সকল ক্যাডারদের (১৬৯) মধ্যে প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন।
তিনি ইতোপূর্বে অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে লজিস্টিকস অ্যান্ড অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন, অর্থ ও লজিস্টিকস, মানব সম্পদ ও ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব স্বচ্ছতার সাথে পালন করেছেন। একত্রিশ বছরের কর্মজীবন তার। এই সময়ে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি থেকে ডিআইজি পর্যন্ত বিভিন্ন পদে বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ পুলিশে দক্ষ, সৎ, চৌকস এবং গ্রহণযোগ্য অফিসার হিসেবে পরিচিত।
রুহুল আমিন এএসপি এবং অ্যাড. এসপি হিসেবে বিভিন্ন জেলা, ডিএমপি, এপিবিএন, পুলিশ স্টাফ কলেজ এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টারে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পুলিশ সুপার হিসেবে রাজবাড়ী, ঝালকাঠি ও সিলেটে এবং সিএমপির ডেপুটি কমিশনার হিসেবে তিনটি জেলা কমান্ড করেন। তার চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ও রেলওয়ে পুলিশ, ঢাকা পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক হিসেবে, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ডিআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) এবং ডিআইজি (মানবসম্পদ) হিসেবে পুলিশ সদর দফতরে কাজ করেন। তিনি অ্যাঙ্গোলায় ইউএন পিসকিপিং মিশনে, রোটেশন অফিসার এবং কসোভোতে রোটেশনের ডেপুটি চিফ (টঘগওক), টিম লিডার এবং চীফ, দক্ষিণ সুদানে লিয়াজন অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের দায়িত্বও পালন করেন। আইভরি কোটে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টও ছিলেন। তার সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি মিশনে জাতিসংঘ পদক লাভ করেন।
রুহুল আমিন গোপালগঞ্জ সদর থানায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম এসএম আব্দুল খালেক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ।
এছাড়াও নতুন আইজিপি হিসাবে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান (১২তম ব্যাচ), অতিরিক্ত আইজি মো. আতিকুল ইসলাম (১২তম ব্যাচ), অতিরিক্ত আইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম (১২তম ব্যাচ), পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার (১২তম ব্যাচ)। এদের মধ্যে অনেকের চাকুরীর মেয়াদ বেশী দিন নেই।
এছাড়াও ১৫তম ব্যাচের এসবির প্রধান অতিরিক্ত আইজি মো. মনিরুল ইসলাম, সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়ার নামও গুঞ্জনে রয়েছে।
তবে দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নে পুলিশ বাহিনীর শীর্ষ পদে সততা, সচ্ছতা ও সুনামসহ কিছু বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে অতিরিক্ত আইজিপিদের মধ্য থেকে নতুন আইজি হিসেবে পদায়ন করবেন বলে সবাই আশা করছেন।