ছবি-সংগৃহীত
চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিজের জীবিত স্বামী আল আমিনকে (২২) মৃত দেখিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করানো হয় দাবি করেছেন মামলার বাদী কুলসুম বেগম।
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের আলেকজাহান এসএম পাড়ার মোস্তাক আহমেদের বাড়ি থেকে মিথ্যা মামলা দায়েরকারী কুলসুম বেগম (২১) ও তার দুই সহযোগীকে আটক করেছে পুলিশ। পরে ওইদিন রাতেই তাদের আশুলিয়া থানায় নিয়ে আসেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রকিবুল ইসলাম।
আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে মিথ্যা মামলার বাদী কুলসুম বেগম জানান, চার বছরের সন্তানকে নিয়ে স্বামী আল-আমীনের সঙ্গে শ্বশুর বাড়ি সিলেটে থাকতেন তিনি। গত ২৮ আগস্ট দাম্পত্য কলহের জেরে সিলেট থেকে সাভারে বোনের কাছে চলে আসেন কুলসুম। আসার পথে গাড়িতে শফিকুরের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তিনি চাকরির জন্য সাভারে আসেন বলে জানান।
কুলসুম বেগম দাবি করে বলেন, ‘এই সুযোগে শফিক আমাকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রুহুল আমীনের কাছে নিয়ে যান। পরে রুহুল আমীন ও শফিকুর আমার চাকরির জন্য জন্ম নিবন্ধন চেয়ে সাভারের সেনা শপিং কমপ্লেক্সে দেখা করেন। এসময় তারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে আমার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা প্রস্তত করেছে বলে জানায়। এতে রাজি না হলে তারা নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে আদালতে নিয়ে উকিলের সামনে কাগজে স্বাক্ষর নেন। রুহুল আমীন ও শফিকুর রহমান ব্ল্যাকমেইল করে মামলা করতে বাধ্য করেছে এবং আমাকে কক্সবাজারে বাসা ভাড়া করে দিয়ে থাকতে বলে।’
বাদী কুলসুমের বোন ফাতেমা বলেন, ‘আমার বোনকে রুহুল আমীন নানাভাবে ভয় দেখিয়েছেন। তিনি মামলা, ফাঁসি এমনকি সবসময় রুহুলের কাছে পিস্তল থাকে বলে ভয়ভীতি দেখান। রুহুল আমীন বেশ কয়েকজনের নাম মামলা থেকে কেটে দিয়েছেন। সে সময় আমার ছোটবোনকে আদালতে নিয়ে যান তারা। তারা বলতো যে অজ্ঞাত ছেলেটা মারা গেছে সে যেন বিচার পায় সেজন্য এই মামলা দায়ের করেছেন। পরে বুঝতে পারি তারা একটি চক্র ও মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। আমার বোন আশুলিয়া কিংবা সাভারে থাকতো না। সে থাকতো সিলেটে। শফিক ও রুহুল আমার বোনকে ফাঁসিয়েছ।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শফিকুর রহমান বলেন, ‘কুলসুমের সঙ্গে আমার গাড়িতে পরিচয় হয়। পরে তাকে নিয়ে আমি রুহুল আমীনের কাছে যাই। তিনি মামলার সব কাজ করেছেন।’
অপর অভিযুক্ত রুহুল আমীন বলেন, ‘কুলসুমই আমার কাছে মামলা করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন। টাকার বিনিময়ে আসামির নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে রুহুল জানায় মনোয়ার মাস্টার, বাশার, ইলিয়াস শাহী ও সারোয়ার তালুকদারের নাম মামলা থেকে বাতিলের জন্য এভিডেভিড করা হয়েছে। তবে তাদের কাছে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।’
আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর বলেন, ‘জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় শফিক, রুহুল আমীন ও কুলসুমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মিথ্যা মামলার বিষয়টি স্বীকার করেছে। আগামীকাল শনিবার মামলার বাদী কুলসুমকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে পাঠানো হবে।’