সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। হত্যা মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও নিরাপদে তাকে দেশত্যাগের সুযোগ দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদসহ বেশ কয়েকজন নেতা।

এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যেও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের শুধু বরখাস্ত নয়, শাস্তির আওতায় আনা হবে। যদি তাদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারি, তাহলে আমি পদত্যাগ কর চলে যাব। বৃহস্পতিবার দিনাজপুরে ডিসি অফিসে এক বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

এর আগে গত বুধবার রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশ ছাড়েন বলে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিমানবন্দরের সূত্রগুলো জানায়, মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তিনি চিকিৎসার জন‍্য থাইল্যান্ডে গেছেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার এক ছেলে (রিয়াদ আহমেদ) ও শ‍্যালক (ডা. নওশাদ খান)। নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাকে দেশত‍্যাগে বাধা দেওয়া হয়নি। আবদুল হামিদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের চিকিৎসকদের পরামর্শেই তিনি বিদেশে গেছেন।

দিনাজপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মো. আবদুল হামিদের এই ঘটনার সঙ্গে যারা যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দেশবাসী যে পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে, সেই পরিস্থিতি থেকে এখন পর্যন্ত অনেক উন্নতি করার চেষ্টা করেছি। তিনি আরও বলেন, অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আইন সবার জন্য সমান, এই বিষয়টিকে বাস্তবে রূপ দিতে সরকার কাজ করছে। 

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করেছেনÑ এমন অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আতাউর রহমান খানের কাছে এ স্মারকলিপি তুলে দেয় গণঅধিকার পরিষদের অঙ্গসংগঠন যুব অধিকার পরিষদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।

এক পুলিশ প্রত্যাহার, সাময়িক বরখাস্ত ২

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এরমধ্যে ২ জনকে বরখাস্ত ও একজনতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনভর আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রাত পৌনে ৮টায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ সদর দপ্তর।

বার্তায় জানানো হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার ও আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং এসবির একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। মামলাটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ওবায়দুল কাদেরের নামও রয়েছে। এ মামলা হওয়ার আগে কিশোরগঞ্জ জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের আসামি করে প্রায় অর্ধশত মামলা হয়। তবে সেসব কোনো মামলাতেই আবদুল হামিদকে আসামি করা হয়নি।