প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের উচিত রমজান মাস আসার আগ থেকেই প্রস্তুতি
গ্রহণ করা। রমজানের জন্য এমনভাবে কর্মসূচি সাজানো উচিত, যাতে ইবাদতের জন্য অধিক সময়
বরাদ্দ করা সম্ভব হয় এবং গোটা রমজান মাসটি কাটানো সম্ভব হয় কল্যাণকামিতায়।
নবী রাসুলুল্লাহ (সা.) অনেক আগে থেকেই (আরবি রজব ও শাবান মাস থেকে)
রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা শুরু করতেন। সাহাবায়ে কেরামকেও রমজানের প্রস্তুতি
গ্রহণের তাগিদ দিতেন। মহানবীর শিক্ষানুযায়ী প্রতিটি মুসলমানের উচিত নিজেদের আল্লাহর
কাছে নিবেদন করতে রমজানের আগেই যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
রমজানের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা যেতে পারে...
জ্ঞানার্জন: প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রমজান মাসের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন
মাসয়ালা-মাসায়েল আগ থেকেই জেনে নেওয়া। রমজান কোরআন নাজিলের মাস। সুতরাং যারা কোরআন
বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে পারেন না, তারা তেলাওয়াত শিখতে পারেন এবং যারা কোরআনের তেলাওয়াত
পারেন, তারা কোরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা পড়ায় সময় কাটাতে পারেন।
ব্যক্তিগত: প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের উচিত রমজান মাসটিতে তিনি দিনের
কোন সময় কী কাজ করবেন এবং রাত কীভাবে কাটাবেন সব কাজের বিস্তারিত তালিকা ও সময়সূচি
তৈরি করা।
পারিবারিক: রমজান মাসে পরিবারের সদস্যদের রমজানের প্রতি আগ্রহী করে
তুলতে রোজার ফজিলতের হাদিস এবং এর বিভিন্ন উপকারিতা তুলে প্রতিদিন কিছু সময় ঘরোয়া তালিম
হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের: রমজানে স্কুলগুলো সাধারণত বন্ধ থাকে। তাই এ সময় অভিভাবকরা
সন্তানদের কোরআন শেখানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
চাকরিজীবীদের: চাকরিতে মালিককে না ঠকানো এবং ইবাদত ছেড়ে নিজেকে না
ঠকানোই হোক প্রত্যেক চাকরিজীবীর এবারের রমজানের সংকল্প। এ ছাড়া পবিত্র রমজান মাসের
পবিত্রতা রক্ষার্থে সব ধরনের অনৈতিক অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। অফিসের কাজের ফাঁকে ও যাতায়াতের
সময় নিজেকে বিভিন্ন ইবাদতে মশগুল রাখা।
জাকাত ও দানের: রমজানের পূর্ব থেকেই সম্পত্তির হিসাব করে জাকাত দেওয়ার
মানসিকতা তৈরি করতে হবে। দান-সদকা করতে হবে। রমজানে অল্প দানে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে বেশি বেশি দান করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,
‘রাসুলুল্লাহ
(সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তার দানশীলতা (অন্য সময় থেকে)
বেশি বাড়ত; যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন।
নারীর প্রস্তুতি: রমজান আসার আগেই নারী-পুরুষের রমজানের প্রস্তুতি
গ্রহণ করা উচিত। প্রত্যেক নারীর উচিত রমজানে দিনগুলোর জন্য কাজের তালিকা তৈরি করা।
সাহরি-ইফতার তৈরি এবং বাসার অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ইবাদতগুলো সঠিক ও দীর্ঘসময় ধরে
কীভাবে করা যায়, তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করা। সঠিক সময়ে নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত,
হাদিস অধ্যয়ন, ইসলামি বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য সময় নির্ধারণ করে নেওয়া ভালো।
পিরিয়ডের সময়: অনেক নারী রোজা রাখার উদ্দেশ্যে ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ
রেখে প্রস্তুতি নেন। তবে পিরিয়ডের সময়ের রোজাগুলো পরবর্তীতে কাজা আদায় করে নেওয়াই উত্তম।
কাজা রোজা আদায়: বিগত বছরে হায়েজ কিংবা নেফাসের কারণে রোজা কাজা থাকলে,
সেগুলো রমজান আসার আগেই রাখা।
তওবা: রমজান আসার আগে থেকেই তওবা-ইস্তিগফার করা। গুনাহ ছেড়ে দেওয়া।
পরিপূর্ণভাবে নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দেওয়া।